অবতরণিকা : আল্লামা তাফাজ্জুল হক রাহ. একটি নাম। একটি প্রতিষ্ঠান। একটি চিন্তা। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির আলিমদের একজন, বৃহত্তর সিলেট বিভাগের আলিমকূল শিরোমণি। ছিলেন এক বর্ণাঢ্য ও সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী। দাওয়াত-তাবলিগ, ওয়াজ-নসিহত, সমাজ সংস্কার, শিক্ষকতা, রচনা ও রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে ছিল তাঁর সরব পদচারণা। তাঁর এই সমৃদ্ধ জীবনের উপর ‘থিসিস পেপারস’ তৈরি হওয়া উচিত। আর নচেৎ তার জীবনী-লেখা অপূর্ণ থেকে যাবে। তদুপরি “মা লা য়ুদরাকু কুল্লুহু লা য়ুতরাকু কুল্লুহু ” (পুরোপুরি না পারলেও পুরোটাই না ছাড়া, অল্প হলেও করা) নীতির ভিত্তিতে এখানে হযরতের জীবনী সম্বন্ধে সংক্ষেপে আরজ করা হল।
নাম : তাফাজ্জুল হক। ছোট বেলায় তিনি নিজ এলাকায় সকলের নিকট আম্বিয়া নামে পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সারা দেশে ‘মুহাদ্দিসে হবিগঞ্জী’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তিনি মাঝারি গড়নের ও জ্যোতির্ময় চেহারার অধিকারী ছিলেন। যেন নূরের আভা টিকরে পড়ছে। খুব সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ হতো। প্রায় আশি বছর বয়স হয়েছিল।
পিতা: মাওলানা শাইখ আব্দুন-নূর রহ.(মৃত: ১৯৯৮ইং)
জন্ম : ১৩৫৯হি. মোতাবেক ১৯৩৮ই.।
ইন্তেকাল: ৫ জানুয়ারি ২০২০ ঈসায়ী।
জন্মস্থান : হবিগঞ্জ শহরের অদূরে ‘কাটাখালী’ গ্রামে এক স¤ভ্রান্ত পরিবারে জন্মলাভ করেন। তাঁর পিতা শাইখ আব্দুন-নূর রহ.ছিলেন বিজ্ঞ আলিম ও সমাজ সংস্কারক। শাইখ তাফাজ্জুল হক রাহ. এর নানা হলেন, আল্লামা আসাদুল্লাহ রহ.। তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির একজন মুজাহিদ ছিলেন। হবিগঞ্জ এলাকার বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও সমাজ সংস্কারকও ছিলেন।
পরিবার : শাইখ তাফাজ্জুল হক রাহ. তাঁর পাঁচ ভাইদের মাঝে তিনিই বড়। তাঁর অন্যান্য ভাইও নিজ নিজ ময়দানে সফল ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
পড়া-লেখা : অন্যদের মত তাঁরও পড়া-লেখার হাতেখড়ি পিতা-মাতার কাছেই। পিতা শাইখ আব্দুন-নূর রহ. ছিলেন একজন বিজ্ঞ আলিম ও সফল শিক্ষক। এরপর তিনি হবিগঞ্জের অদূরে রায়ধর গ্রামের ঐতিহাসিক মাদরাসা ‘জামিয়া সা’দিয়্যায়’ ভর্তি হন। সেখানে তিনি তাঁর মামা আল্লামা মুখলিসুর রহমান রহ.(মৃত ১৪২২হি.) এর নিকট আরবী ব্যাকরণ ও আরবি ভাষা রপ্ত করেন। তাঁর মামা ছিলেন শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.এর ছাত্র। এ এলাকার এক সময়ের সফল চেয়ারম্যানও ছিলেন। এ কারণে তিনি নিজ এলাকায় ‘চেয়ারম্যান সাহেব’ নামেও পরিচিত। তাঁর নানার মত তাঁর মামাও বড় মুজাহিদ ছিলেন। বাতিলের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। সমাজ সংস্কারে তাঁরও অসামান্য ভূমিকা রয়েছে।
পড়ালেখার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম গমন : প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে তিনি উপমহাদেশের বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘জামিয়া আহলিয়্যা মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা’ চট্টগ্রামে গমন করেন। সেখানে তিনি ফিক্হ, উসূলে ফিক্হ, তাফসীর, উসূলে তাফসীর, হাদীস ও উসূলে হাদীস, মানতেক-ফালসাফাসহ ইসলামের বিভিন্ন শাখার গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেন। এখানে তিনি মুফতী আযম মুফতী ফায়যুল্লাহ রহ. এর বিশেষ সান্নিধ্য লাভে ধন্য হন। ছাত্র হিসাবে তিনি প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন। উস্তাযদের প্রিয় পাত্র ছিলেন। ছাত্র যামানায় সর্বদা পড়াশোনাকে প্রাধান্য দিতেন। সময় নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতেন। ক্লাসের বাইরে লাইব্রেরীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অধ্যয়নে মগ্ন থাকতেন। অবশেষে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে ১৯৬০-৬১ইং সনে ‘দাওরায়ে হাদীস’ সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন।
উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান গমন : জ্ঞান আহরণের সুতীব্র আকাঙ্খায় কিশোর তাফাজ্জুল ছুটে এসেছেন বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। সবশেষ পাড়ি জমিয়েছেন তৎকালীন সূদুর পশ্চিম পাকিস্তানে। সেখানে ঐতিহাসিক ইসলামী বিদ্যাপিঠ ‘জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর’-এ আরো গভীরভাবে হাদীস অধ্যয়নের জন্য দ্বিতীয়বার দাওরায়ে হাদীস ক্লাসে ভর্তি হন। সময়টা ছিল-৬১-৬২ ঈসায়ী। লাহোরে থাকাকালীন তিনি ‘খানকায়ে রায়পুরের’ (সাহারানপুর) প্রসিদ্ধ বুযুর্গ ও আল্লাহর ওলী শাইখ আব্দুল ক্বাদের রায়পুরী রহ. (মৃত. ১৩৮২হি.) এর ইসলাহী মজলিসে উপস্থিত হতেন। তাঁর খানকায় এক সপ্তাহ অবস্থানও করেছেন। তাঁর জানাযায়ও উপস্থিত হয়েছিলেন। এরপর তিনি খানপুরে গমন করেন। সেখানে উপমহাদেশের বিখ্যাত তাফসীরবিদ ও হাদীস বিশারদ হাফিযুল হাদীস আব্দুল্লাহ দরখাস্তী (মৃত.১৪১৫হি.) রহ.এর নিকট তাফসীরের বিশেষ পাঠ গ্রহণ করেন। এরপর ‘জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া করাচী’ মাদরাসায় বিশ্ববিখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা ইউসূফ বিনূরী রহ. (মৃত.১৩৯৭হি.) এর নিকট গমন করেন। তাঁর কাছে তিনি তিনটি বিষয় ও কিতাবের বিশেষ দরস গ্রহণ করেন। যথা- ক. বিষয়: হাদীস শাস্ত্র। কিতাব: সহীহুল বুখারী। খ. বিষয়: শরীয়তের বিধানের বিভিন্ন রহস্য ও ভেদ। কিতাব: হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা। গ.বিষয়: তাফসীরুল কুরআনিল কারীম। এভাবে তিনি পূর্বোক্ত আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী রহ. ও আল্লামা বিনূরী রহ.এর কাছে দরস গ্রহণের মাধ্যমে তাফসীর শাস্ত্রে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করেন। এখানে তিনি কয়েক মাসের মত ছিলেন।
ভারত গমন : এরপর তিনি ভারতের বিখ্যাত মাদরাসা ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’ গমন করেন। দেওবন্দ গমনের পথে অনাকাঙ্খিত ভাবে তিনি তাবলীগ জামাতের বড় মুরুব্বী ও দাঈ আল্লামা ইউসূফ ইবনে ইলইয়াস কান্ধলভী রহ. এর সঙ্গ লাভে ধন্য হন। এক সফরেই তাঁর সাথে হযরতের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
হযরতের আবেদনে আল্লামা ইউসূফ কান্ধলভী রহ. হযরতকে সাহারানাপুরে শাইখুল হাদীস যাকারিয়া রহ.এর সোহবতে পৌঁছিয়ে দেন। তিনি শাইখুল হাদীস ছাহেবের সোহবতে দশদিনের মত ছিলেন। এখানে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি শাইখের সহীহুল বুখারীর দরসেও উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।এরপর আল্লামা ইউসূফ কান্ধলভী রহ.-ই হযরতকে দারুল উলূম দেওবন্দে নিয়ে যান। দেওবন্দে তিনি ফেদায়ে মিল্লাত আসআদ মাদানী রহ.এর মেহমান হয়ে ধন্য হন। এখানে তিনি ঐতিহাসিক ‘মাদানী মনযিলে’ মেহমান হিসাবে অবস্থান করেন। আল্লাহর কুদরতের কী কারিশমা! মাত্র একটি সফরে তিনি পৃথিবী বিখ্যাত কয়েকজন মনীষীর সান্নিধ্য পেয়ে গেলেন। সবই তাক্বদিরের ফায়সালা।
আল্লাহ পাক যাকে বড় করতে চান তাকে এভাবেই পর্দার আড়াল থেকে গড়ে তুলেন তিলে তিলে। একসময় তা ফুল হয়ে সুবাস ছড়ায় পৃথিবীর বুকে। দারুল উলূম দেওবন্দে তখন পাকিস্তানী কোন ছাত্র ভর্তি হওয়ার নিয়ম ছিল না। এদিকে ভর্তির সময়ও শেষ। এই দুই কারণে তিনি ভর্তি না হয়ে তৎকালীন মুহতামিম (প্রিন্সিপাল) ক্বারী তৈয়ব ছাহেব রহ.এর অনুমতিতে ‘খুসূসী দরস’ (বিশেষ পাঠ) গ্রহণ করেন। জামে তিরমিযী পড়েন শাইখ ইবরাহীম বলিয়াভী রহ.এর নিকট। তাফসীরে বায়যাবী পড়েন আল্লামা ফখরুল হাসান মুরাদাবাদী রহ.এর নিকট। তখন ক্বারী তৈয়ব ছাহেব রহ.এর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগার-দরসেও উপস্থিত হয়েছেন। এভাবে ‘খুসূসী দরস’ শেষ করে বার্ষিক পরীক্ষার আগেই ১৯৬৩ সনে দেশে ফিরে আসেন।
তাঁর উস্তাযবৃন্দ : আমরা দেখেছি, তিনি বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মহা-মনীষীদের সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়েছেন। নিম্নে! হযরতের উস্তাযবৃন্দের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা পেশ করা হল।
হবিগঞ্জ: তার পিতা মাওলানা শাইখ আব্দুন-নূর হবিগঞ্জী রহ., মামা মাওলানা মুখলিসুর রহমান হবিগঞ্জী রহ., মামা মাওলানা আব্দুল লতিফ ছাহেব হবিগঞ্জী রহ., ক্বারী মাওলানা মেছবাহুজ্জামান কদুপুরী রহ., মাওলানা আব্দুল কদ্দুস সাহেব রহ., মাওলানা আশরাফ আলী সাহেব রহ. (শায়েস্তাগঞ্জী), মুফতী আব্দুল গফুর দরিয়াপুরী রহ. (মৃত্যু : ১৯৯৮ ঈ.), তাঁকে হবিগঞ্জের মুফতীয়ে আযম বলা হত। আল্লামা শরফুদ্দীন রহ. (শাইখে বেড়াখালী)।
চট্টগ্রাম, হাটহাজারী: আল্লামা আব্দুল ওয়াহাব রহ. (মৃত.১৪০২হি.), আল্লামা নযীর আহমদ রহ., আল্লামা আব্দুল কাইয়্যূম রহ. (মৃত.১৪০১হি), আল্লামা আব্দুল আযীয রহ. (মৃত.১৪২০হি.) আল্লামা আবুল হাসান রহ., আল্লামা মুহাম্মাদ আলী রহ., আল্লামা মুফতী আহমাদুল হক রহ. (মৃত. ১৪৩১হি.), মুফতী আযম মাওলানা ফায়যুল্লাহ রহ. (মৃত.১৩৯৬হি.), আল্লামা হামিদ সাহেব রহ. ও আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.।
পাকিস্তান: হাফিজুল হাদীস আব্দুল্লাহ দরখাস্তী রহ. (মৃত.১৪১৫হি.), আল্লামা ইউসূফ বিনূরী রহ. (মৃত,১৩৯৭.), আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী রহ. (মৃত.১৩৯৪হি.) ও আল্লামা রসূল খান ছাহেব রহ. (মৃত.১৩৯১হি.)।
ভারত: শাইখুল হাদীস যাকারিয়া রহ. (মৃত.১৪০২হি.), আল্লামা ক্বারী তৈয়ব সাহেব রহ. (মৃত.১৪০৩হি.), আল্লামা ফখরুল হাসান মুরাদাবাদী রহ. (মৃত.১৩৯২হি.) ও আল্লামা ইবরাহীম বলিয়াভী রহ. (মৃত.১৩৮৭হি.)।
উপরোক্ত উলামায়ে কেরামের অনেকের আলোচনা হযরতের ‘মনীষীদের স্মৃতিচারণ’ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।
কর্মজীবন : এ বিষয়ে তিনি নিজেই তাঁর স্মৃতিচারণমূলক প্রকাশিত পুস্তিকা ‘মণীষীদের স্মৃতিচারণে’-এ আলোচনা করেছেন। সেখান থেকে হুবহু এখানে পেশ করা হল-
কুমিল্লার দারুল উলূম বরুড়া মাদরাসা: ‘পাকিস্তান ও ভারতে পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফিরে প্রথমে কুমিল্লার দারুল উলূম বরুড়া মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করি। ৬৪-৬৬ ঈ. মোট তিন বছর এ মাদরাসায় হাদীস, তাফসীর ও ফুনূনাতের বিভিন্ন কিতাবের দরস দানের সুযোগ হয়।
আশরাফুল উলূম বালিয়া মাদরাসা : এরপর ৬৬ ঈ. সনের শেষে ময়মনসিংহের আশরাফুল উলূম বালিয়া মাদরাসার শাইখুল হাদীস মাওলানা মোহাম্মদ আলী ছাহেব কিশোরগঞ্জের মাওলানা আতহার আলী ছাহেবের মাদরাসায় চলে যান। তখন বালিয়া মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন মাওলানা দৌলত আলী ছাহেব। তিনি হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা শাহ আব্দুল ওয়াহ্হাব ছাহেবের নিকট পত্র লিখলেন, বালিয়া মাদরাসার জন্য একজন শাইখুল হাদীস দেয়ার জন্য। শাহ ছাহেব তখন আমাকে চিঠি লিখে বালিয়া মাদরাসায় যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। বড়দের নির্দেশ অনুযায়ী ৬৯ ঈ. সন পর্যন্ত মোট তিন বছর বালিয়া মাদরাসায় ছিলাম। আগেও তিন, এখানেও তিন।
জামিয়া ইসলামিয়া ময়মনসিংহ : ১৯৬৯-৭১ ঈ. ১৬ ডিসেম্বরের পূর্ব পর্যন্ত এ জামিয়া ইসলামিয়ায় দরসে হাদীসের খেদমতের সুুযোগ হয়েছে। এখানেও তিন। এভাবে ‘তিনে তিনের’ এক আশ্চর্য ছন্দ তৈরি হয়ে গেল।
জামিয়া আরাবিয়া উমেদনগর, হবিগঞ্জ : ৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জে আসি। এলাকাবাসী ও মুরুব্বীদের অনুরোধে হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া উমেদনগর মাদরাসায় যোগদান করি। আর মৃত্যু পর্যন্ত এখানেই ছিলেন। জামিয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা সর্বশেষ ইন্তেকালের পূর্বে দেশের শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গার শায়খুল হাদিস হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। জামিয়া রেঙ্গার অর্ধশতাব্দিকালের শায়খুল হাদিস আল্লামা শিহাব উদ্দিন চতুলী রাহ. ইন্তেকাল করলে তার স্থলাভিষিক্ত হন তিনি।
বৈবাহিক জীবন : ময়মনসিংহের বিখ্যাত আলিম মাওলানা আরিফ রব্বানী রহ.(১৯৯৭ইং) এর কন্যাকে ১৯৬৭ ইং সনে বিবাহ করেন। হযরতের ৫ ছেলে ও ৪ মেয়ে। সবাই যোগ্য আলিম ও আলিমা হয়ে দ্বীনের বিভিন্ন খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
বাইতুল্লাহর যিয়ারত : আল্লাহর রহমতে হযরতের বহুবার হজ্জ ও উমরা করার সুযোগ হয়েছে। সর্বপ্রথম ৭৫ সালের শেষ দিকে বাইতুল্লাহর যিয়ারতের জন্য রওয়ানা হন। হজ্ব হয়েছিল ৭৬ এর শুরুতে।
আধ্যাত্মিক সাধনা ও খেলাফত লাভ : হযরত হবিগঞ্জী রহ. জীবনের দীর্ঘ সময় বিভিন্ন মনীষীদের সান্নিধ্য থেকে আধ্যাত্মিক সাধনায় ব্রতী হন। সর্ব প্রথম তিনি মুফতী আযম শাইখ ফায়যুল্লাহ রহ.এর নিকট বায়আত হন। এরপর হযরতের ইন্তেকালের পর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার
বৃহত্তর রেঙ্গা এলাকার প্রখ্যাত বুযুুর্গ, খলিফায়ে মাদানী আল্লামা বদরুল আলম শায়খে রেঙ্গা (মৃত.১৯৮৫হি.) রহ. এর নিকট বায়আত হন। তিনি শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর ছাত্র ও খলীফা ছিলেন। দীর্ঘদিন রিয়াযতত-মুজাহাদা করেন। এরপর এক সময় শাইখ রেঙ্গা রহ. ইজাযত ও খেলাফত দান করেন।
রাজনৈতিক জীবন : তিনি শুরু থেকেই ইসলামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের তিনি ‘নায়বে আমির’ ছিলেন। আর হবিগঞ্জ জেলার সভাপতি ছিলেন। হবিগঞ্জ ও দেশে ইসলাম বিরোধী কিছু হলে তিনি জমিয়তের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানাতেন। মিছিল, মিটিং করতেন। রাজপথে জনগণের সাথে নেমে একাত্মতা ঘোষণা করতেন। শেষ বয়সেও যেকোন ইসলামী ইস্যুতে রাজপথে হুইল চেয়ারে বসে প্রতিবাদ করতেন। শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশগ্রহণ করতেন।
তথ্যসূত্র: মনীষীদের স্মৃতিচারণ।