ভূমিকা : বৃটিশ প্রবর্তিত পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াবহতা ও বিষফল থেকে উপমহাদেশের সরলমনা মুসলমানদের ঈমান আক্বীদা ও ইতিহাস ঐতিহ্য অক্ষ্ন্নু রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে ঘটিয়েছে সফল বিপ্লব। ভেঙ্গে দিয়েছে জাতির ভ্রান্ত বিশ্বাসের শক্ত প্রাচীর। জ্বালিয়েছে আলোর দীপ্ত মশাল। সেসবের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঐতিহাসিক দারুল উলূম দেওবন্দ। সে দেওবন্দের একটি সফল শাখা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা কানন “জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, উমেদনগর, হবিগঞ্জ”।
নামকরণ: শাইখুল ইসলাম আল্লামা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ. এই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখেন জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া।
ভৌগলিক অবস্থান: খোয়াই নদীর উত্তর তীরে হবিগঞ্জ জেলা সদরের উমেদনগরস্থ নবীগঞ্জ রোডঘেঁষে মনোমুগ্ধকর সবুজে ঘেরা এবং বিহঙ্গ কাফেলার কাকলিতে মুখরিত।
প্রতিষ্ঠাকালীন প্রেক্ষাপট: ঈসায়ী ১৯৫৮ সাল। শাইখুল আরব ওয়াল আযম আল্লামা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ. এর অনুপ্রেরণা ও ইঙ্গিতে গড়ে উঠে দেশের অন্যতম বৃহৎ দ্বীনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন মাওলানা মিসবাহুজ্জামান সাহেব রাহ., মাওলানা সুলায়মান আহমদ রাহ., হাজী ফজলুল করীম মুন্সী রাহ., হাজী আব্দুল কাদির রহ. ও মাওলানা ইউনুস আহমদ রাহ.। এই সময় মাদরাসার পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন মাওলানা শরীফ আহমদ সাহেব রহ.। তিনি কয়েক বছর মুহতামিমও ছিলেন।
জামিয়ার রূপকার : আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী রহ. একটা নাম, একটা ইতিহাস, একটা অধ্যায়। যিনি একাধারে অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। ১৯৭৫ সাল থেকে ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিলে তিলে গড়েছিলেন এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিকে এবং উহার উন্নতির লক্ষ্যে সফর করেছেন দেশ-বিদেশ। আর পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বিশ্বের সাথে। উনার কারণেই আগমন করেছেন বিশ্ব বরেণ্য উলামায়ে কেরাম। যিনি সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন মুহাদ্দিসে হবিগঞ্জী নামে। আল্লাহ তা’য়ালা উনাকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। আমীন।
বর্তমান মুহতামিম: মুহাদ্দিসে হবিগঞ্জী রাহ. এর সুযোগ্য বড় সাহেবজাদা হাফিজ মাওলানা মাসরুরুল হক দা.বা.।
শাইখুল হাদীস : প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা মুফতি আব্দুল কাইয়ূম শায়খে কালাইঞ্জুরী দা: বা:।
প্রধান মুফতি : মুফতি আব্দুল কাইয়ূম শায়খে কাটাখালী দা. বা.।
আসাতিযায়ে কেরাম : ৩৮জন।
ছাত্র সংখ্যা : ৫৫০জন।
কর্মচারী সংখ্যা : ৫জন
জামিয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক তা’লীম তরবিয়াতের মাধ্যমে হক্কানী আলেম ও দ্বীনের দাঈ তৈরী করণ, যুগ চাহিদার ভিত্তিতে দ্বীনের সকল দাবী পূরণে সক্ষম ব্যক্তি গঠনের লক্ষ্যে তাদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান এবং এই প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে দুনিয়ার কল্যাণ ও আখেরাতের মুক্তির রাস্তা সুগম করা। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বিদা বিশ্বাস ও ফিকহে হানাফীর সংরক্ষণ এবং আকাবিরে দেওবন্দের অনুসরণ ও অনুকরণে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনি শিক্ষার বাস্তবায়ন। ইসলাম ও মুসলমানদের র্স্বার্থবিরোধী সকল বাতিল শক্তির নিয়মতান্ত্রিক মোকাবেলা পূর্বক সমাজ থেকে নাস্তিক্যবাদ ও সকল প্রকার শিরক-বিদ’আতের মূলোৎপাটন , সমাজের সর্বস্তরের ন্যায়-নীতি ও ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন, সমাজ ও দেশের প্রতিটি সদস্যের আত্মিক পরিশুদ্ধি, দ্বীনি সচেতনতা বৃদ্ধি ও মানবিক গুনাবলী বিকাশের মাধ্যমে দ্বন্দ মুখর অশান্ত সমাজকে সুশীল সমাজে রুপান্তরিত করা।
জামিয়ার বিভাগ সমূহ :
১ নূরাণী বিভাগ: এই বিভাগে কোমলমতি শিশুদেরকে খুবই আদরের সাথে আদব-আখলাক, হাতের লিখা, ইংরেজী, বাংলা ও আরবী শিক্ষা দেওয়া হয়।
২ হিফজ বিভাগ : জামিয়ার হিফজ বিভাগের সুদক্ষ হাফিজ সাহেবগণ আন্তর্জাতিক মানের হাফিজ তৈরীতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে ছাত্ররা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতায় মেধার স্বাক্ষর বহন করছেন।
৩ কিতাব বিভাগ : এটি জামিয়ার প্রধান ও বৃহত্তম বিভাগ। এ বিভাগে বর্তমানে ৬ টি স্তর রয়েছে।
ক. ইবতেদাইয়্যাহ (প্রাথমিক), খ. মুতাওয়াসসিত (মাধ্যমিক), গ.ছানুবিয়্যাহ (উচ্চ
মাধ্যমিক). ঘ. ফযীলত (স্নাতক), ঙ. তাকমীল বা দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স)।
৪ মাদানী নেসাব:
৫ ছাত্র প্রশিক্ষণ বিভাগ : সিলেবাসভুক্ত কিতাবাদি শিক্ষা দানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ ও অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা পরিস্ফুটনের লক্ষ্যে ছাত্র পাঠাগার , মাসিক দেয়ালিকা, সাপ্তাহিক বক্তৃতা প্রশিক্ষণ মজলিস, বিষয় ভিত্তিক তারবিয়াত ও সাহিত্য মজলিসের কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
শিক্ষাবোর্ড : ১. আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ।
২. বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া ,বাংলাদেশ।
৩. দ্বীনি শিক্ষাবোর্ড, হবিগঞ্জ।
৪. হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ
বার্ষিক ব্যয় : ১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা।
আয়ের উৎস : মৌসুমী চাঁদা, দ্বীন-দরদী জনগনের অনুদান ও সদকায়ে জারিয়া।